শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
চিকিৎসকের অবহেলায় চলে গেলো ফুটফুটে ছোট্ট একটি শিশুটির প্রাণ, এমনটাই অভিযোগ স্বজনদের। চিকিৎসকের দায়িত্বহীনতার বিষয়টি সামনে এনেছেন হাসপাতালে থাকা খোদ নার্স ও। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত চিকিৎসক। আর ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাজিব শেখ ও রুবিনা দম্পতির সন্তান মুসাফির। গত দুই দিন ধরে পেটে গ্যাস ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে ভুগছিল । বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে শিশুটিকে নিয়ে আড়াইশো শয্যা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসে মা রুবিনা বেগম। এ সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন ডাঃ শরীফ-উর রহমান। তাকে শিশুটির অসুস্থ্যতার বিষয়টি জানানো হলে তরল জাতীয় একটি ওষুধ লিখে দেন তিনি। ওষুধটি খাওয়ানোর পর শিশু মুসাফির আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে । বেশ কয়েকবার বমি ও করে। অবস্থা বেগতিক দেখে মা রুবিনা বেগম ও স্বজনরা জরুরি বিভাগে কয়েকবার ডাক্তারকে ডেকে আনতে যান। চিকিৎসক শরীফ-উর রহমান বিষয়টি আমলে নেয়নি। শিশুটির অবস্থা আরো খারাপ হওয়া শুরু হলে কর্তব্যরত স্টাফ নার্স সীমা বৈদ্য প্রথমে ওয়ার্ডবয় ও শেষে আয়াকে পাঠান ডাক্তারকে ডাকতে। সেসবে ও কর্ণপাত করেননি ডাক্তার শরীফ-উর রহমান। উপরন্তু শিশুটির অক্সিজেন মাস্ক খুলে তার কাছে নিয়ে যেতে বলেছেন। তবে শিশুর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় অক্সিজেন খুলতে অপারগতা প্রকাশ করেন নার্স। এরপর চিকিৎসক শরীফ উর রহমান শিশু মুসাফিরকে আর দেখতে আসেননি। একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে মারা যায় শিশু মুসাফির।
মুসাফিরের মা রুবিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার মানিক যখন অনেক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে আমি নিচে অনেকবার দৌড়ে ডাক্তারকে ডাকতে যাই। তিনি আমাকে ধমক দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিয়ে বলেন আমি আসতেছি। কিন্তু ডাক্তার আর আসেনি। আজ যদি আমার মানিককে চিকিৎসা দেওয়া হতো তাহলে ও বেঁচে থাকতো। আমি আমার মানিকরে ছাড়া কীভাবে থাকবো।
বাবা রাজিব শেখ বলেন, ডাক্তারের অবহেলায় আমার বাচ্চা মারা গেছে। তাকে অনেকবার অনুরোধ করেছি বাবুকে দেখে যেতে। উনি আসেননি। আজ আমি ডাক্তারের জন্য সন্তানহারা হয়ে গেলাম। আমার বাচ্চার মতো আর কারো বাচ্চা যেন এভাবে চিকিৎসকের অবহেলায় মারা না যায় আমাদের এটাই দাবি।
হাসপাতালে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সীমা বৈদ্য বলেন, বাচ্চাকে প্রথমে আমি অক্সিজেন লাগিয়ে দেই। এরপর আমাকে বেশ কয়েকবার রোগীর লোক ডাকলে আমি বাচ্চাটাকে দেখে আসি। কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ডাক্তারকে ডাকতে আমার ওয়ার্ড বয়কে দুইবার নিচে পাঠিয়েছি। ডাক্তার বলে বাচ্চাটার অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিচে নিয়ে যেতে। বাচ্চাটার অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমি অক্সিজেন মাস্ক না খুলে আয়াকে দিয়ে পুনরায় ডাক্তারকে ডাকতে পাঠাই। কিন্তু তিনি শুধু একই কথা বলে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে বাচ্চাটা মারা গেলে আমি নিচে গিয়ে ডাক্তারকে আর পাইনি। যখন বাচ্চাটির খারাপ অবস্থা ছিল তখন ডাক্তার এলে হয়তো বাচ্চাটা বেঁচে থাকতো।
এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শরীফ-উর রহমানকে মুঠোফোনে কল দিলে ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এমন অভিযোগ সত্য নয়। কেউ বাচ্চা নিয়ে জরুরী বিভাগে আসেনি।
শরীয়তপুরসদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা (আরএমও) মিতু আক্তার বলেন, আমি এরইমধ্যে এক শিশুর মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। যদি ওই চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুর মৃত্যু হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।